সহজাত আবেগ বা ইনসটিংক্টসঃ জন্মগত যে শক্তির সাহায্যে একটি প্রজাতির সকল সদস্য কোনো শিক্ষণ ছাড়া এবং উদ্দেশ্য ও ফলাফল সম্বন্ধে অবহিত না থেকে আত্মরক্ষা ও প্রজাতিরক্ষায় বংশ পরম্পরায় একইভাবে কাজ করে থাকে সেটাই ইনসটিংক্ট।
আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, ইনসটিংক্ট হচ্ছে নিসর্গ পরিচালিত এক শক্তি। ডারউইন (১৮৫৯), সর্বপ্রথম ইনসটিংক্টের বাস্তবমুখি একটি সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রাকৃতিক নির্বাচন প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা এক জটিল প্রতিবর্তী। ডারউইনের সংজ্ঞায় প্রচ্ছন্নভাবে হলেও এ বক্তব্যটি উঠে এসেছে যে উত্তরাধিকার সূত্রের মাধ্যমে আগত সাড়াদানের প্রক্রিয়ায় ইনসটিংক্টের প্রকাশ ঘটে। .
লরেঞ্জ (Lorenz, 1937) ডারউইনের বক্তব্য মেনে নিলেও কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করে বলেন যে প্রত্যেক প্রাণিপ্রজাতির আচরণ কতকগুলো স্থায়ী (বা অপরিবর্তনীয়) অ্যাকশন প্যাটার্ণ (Fixed Action Pattem, FAP) নিয়ে গঠিত, আর FAP-গুলো হচ্ছে প্রজাতি-নির্দিষ্ট, অতএব জিনগতভাবে নির্ধারিত (genetically determined)। লরেঞ্জ আরও বলেছেন যে প্রতিটি FAP-ই ইনসটিংক্ট এবং প্রাণিদেহে অনেক ইনসটিংক্ট কেন্দ্র রয়েছে। (Tinbergen, 1951) লরেঞ্জ প্রদত্ত ধারণাকে সামগ্রিকভাবে সমর্থন জানিয়েছেন।যা হোক, সদ্যোজাত হেরিংগাল ও তার মায়ের মধ্যে যে সাড়া (response) প্রদর্শিত হয় তা থেকে ইনসটিংক্টের সুন্দর ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। ক্ষুধার্ত হেরিংগাল ছানা চাক্ষুষ উদ্দীপনার প্রতি সংবেদনশীল। অন্যদিকে, বাসায় ছানার উপস্থিতি পূর্ণাঙ্গ হেরিংগাল-এ চাক্ষুষ উদ্দীপনা (visual stimuli) হিসেবে কাজ করে। রিলিজিং উদ্দীপনার মাধ্যমে যে বার্তার সৃষ্টি হয় তা অপটিক স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কের একটি কেন্দ্রে বাহিত হয়। এ কেন্দ্রই সুনির্দিষ্ট বার্তার প্রতি নির্দিষ্ট সাড়া দেয়। এ প্রক্রিয়াটি সহজাত রিলিজিং পদ্ধতি (Innate Releasing Mechanism, IRM)। IRM নির্দিষ্ট পেশিকে সংকোচন ও প্রসারণের নির্দেশ দেয়। ফলে ছানার ঠোকর পড়ে পূর্ণাঙ্গ হেরিংগাল-এর ঠোঁটে অবস্থিত লাল ফোঁটার উপর। এটাই হচ্ছে স্থায়ী অ্যাকশন প্যাটার্ণ (FAP)।
আরও দেখুন...